নারীদের জীবনে যৌন ইচ্ছা বা যৌন আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তন একটি সাধারণ এবং প্রাকৃতিক ঘটনা। তবে অনেক সময় এই ইচ্ছা হঠাৎ করে কমে যেতে পারে, যা শরীরের শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক কারণগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ব্লগে আমরা নারীদের যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
১. হরমোনের পরিবর্তন
নারীদের যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ হলো হরমোনের পরিবর্তন। মাসিক চক্র, গর্ভধারণ, মেনোপজ বা হরমোনজনিত অন্যান্য কারণগুলো যৌন ইচ্ছার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
কারণগুলো:
মাসিক চক্রের সময়: ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের ওঠানামা যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দিতে পারে।
মেনোপজ: মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে যৌন ইচ্ছা প্রভাবিত হতে পারে।
গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম: গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মের পর হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে অনেক নারীর যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়।
২. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ যৌন ইচ্ছাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। কর্মক্ষেত্রের চাপ, পারিবারিক দায়িত্ব, আর্থিক সমস্যা বা সম্পর্কের জটিলতা—এসব মানসিক উদ্বেগ যৌন ইচ্ছাকে কমিয়ে দিতে পারে।
কিভাবে প্রভাবিত করে:
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ নারীদের মস্তিষ্কের যৌন ইচ্ছা কেন্দ্রকে নিষ্ক্রিয় করে তুলতে পারে।
মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা যৌন আকাঙ্ক্ষার হ্রাস ঘটায়।
৩. সম্পর্কের সমস্যা
যদি সম্পর্কের মধ্যে মানসিক দূরত্ব বা যোগাযোগের সমস্যা থাকে, তবে যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। সম্পর্কের সমস্যাগুলোর মধ্যে বিশ্বাসহীনতা, অবিশ্বাস, ঝগড়া, অথবা একে অপরের প্রতি আস্থার অভাব বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
উদাহরণ:
পারস্পরিক ভালোবাসার অভাব
অব্যাহত ঝগড়া বা মানসিক দূরত্ব
সম্পর্কের প্রতি বিরক্তি বা অনীহা
৪. শারীরিক অসুস্থতা
বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা এবং স্বাস্থ্য সমস্যা যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, এবং থাইরয়েডের সমস্যা—এসব কারণে যৌন ইচ্ছার প্রভাব পড়তে পারে।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া:
ডায়াবেটিস বা হার্টের সমস্যায় রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে না হওয়ার কারণে যৌন ইচ্ছা হ্রাস পেতে পারে।
থাইরয়েডের সমস্যা শরীরের হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটিয়ে যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দেয়।
৫. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দিতে পারে। এই ওষুধগুলো শরীরের হরমোন বা মস্তিষ্কের স্নায়ুতে প্রভাব ফেলে, যা যৌন ইচ্ছা হ্রাসের কারণ হতে পারে।
উদাহরণ:
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট: ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপ কমানোর ওষুধ যৌন আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দেয়।
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি: হরমোনাল বড়ি শরীরের ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা পরিবর্তন করে।
৬. শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি
নারীরা যদি শারীরিক বা মানসিকভাবে অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকেন, তবে যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া স্বাভাবিক। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা, পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব পালন করা ক্লান্তির কারণ হতে পারে। ফলে শরীর এবং মন বিশ্রামের প্রয়োজন অনুভব করে এবং যৌন ইচ্ছা হ্রাস পায়।
৭. আত্মবিশ্বাসের অভাব
নিজের শরীর বা মানসিক অবস্থার প্রতি আস্থার অভাব থাকলেও যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে। বিশেষ করে নারীরা যদি শরীরের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন বা নিজের শারীরিক আকৃতির প্রতি নেতিবাচক অনুভূতি পোষণ করেন, তবে তারা যৌন আকাঙ্ক্ষা হারাতে পারেন।
উদাহরণ:
শরীরের ওজন নিয়ে চিন্তা
নিজের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
নারীদের যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করে, যার মধ্যে শারীরিক, মানসিক ও সম্পর্কগত বিভিন্ন ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ। হরমোনের পরিবর্তন, মানসিক চাপ, সম্পর্কের সমস্যা, শারীরিক অসুস্থতা বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া—সবকিছুই যৌন ইচ্ছাকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি যৌন ইচ্ছা কমে যায়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে সমাধান করা সম্ভব।
আরো পড়ুন :
অকাল বীর্যপাত: কারণ, উপসর্গ ও সমাধান
যৌন সমস্যার উপসর্গ এবং কারণ: জানতে হবে সঠিক সমাধানের জন্য
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন : https://www.youtube.com/@ladduesnutrition